বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এতিম-বিপন্ন শিশুদের জন্য ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ চালুর উদ্যোগ থমকে আছে গত পাঁচ বছর ধরে।
রাজধানীর মাতুয়াইলের সরকারি শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ) ২০১৭ সালে দেশের প্রথম হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর মিল্ক ব্যাংকের কাজ শুরুর কথা ছিল। এজন্য বিদেশ থেকে আধুনিক যন্ত্রপাতিও আনা হয়। তবে ধর্মীয় প্রশ্নে বিরোধিতার মুখে এটি আটকে আছে।
মাতৃহারা নবজাতক কিংবা মায়ের দুধ স্বল্পতায় আক্রান্ত শিশুদের পান করানোর জন্য অন্য মায়ের দুধ সংগ্রহ করে তা উপযুক্তভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সূচনা হয় ১৯৪৩ সালে ব্রাজিলে। ইউরোপের বিশটিরও বেশি দেশে মাতৃদুগ্ধ সংরক্ষণাগার রয়েছে।
বাংলাদেশে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা নিয়ে আপত্তি উঠেছে দেশের শীর্ষ আলেম ও মুফতিদের তরফ থেকে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, এমন উদ্যোগ নবজাতক অনেক শিশুর জন্য আপাতদৃষ্টিতে উপকারী মনে হলেও মুসলিম সমাজের আত্মীয়তার বন্ধনে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করবে। তারা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, যেহেতু মিল্ক ব্যাংকে একসঙ্গে অনেক মায়ের দুধ একত্রিত থাকবে, তাই কোন মায়ের দুধ কোন শিশুকে দেয়া হচ্ছে তা নির্ণয় করাও অসম্ভব হয়ে যাবে। ফলে অজানা অসংখ্য দুধ ভাই-বোনের সৃষ্টি হবে। আর ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক দুধ ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হারাম। এ ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা রয়েছে যে, ভবিষ্যতে বিয়ের ক্ষেত্রে দুধ ভাই-বোনের বিষয়টি অজানা থেকে যাবে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় তফসির পরিষদ, বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাইউম বলেন, এ নিয়ে ইসলামি দেশ সমূহের সহযোগিতা সংগঠন ওয়াইসি ইতোমধ্যে ফতোয়া দিয়েছে। বাংলাদেশের ইসলামি ফউন্ডেশন এবং আলেমদের সাথে পরমার্শ করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবার পরামর্শ দেন মাওলানা আহমেদ আব্দুল কাইউম।
হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ চালুর জন্য ঢাকার মাতুয়াইলের সরকারি শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইসিএমএইচ) আনা সরঞ্জাম
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক স্থাপন প্রসঙ্গে একটি আইনি নোটিস প্রেরণ করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, শিশু-মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইসিএমএইচ), নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্র (স্কানো), নবজাতক আইসিইউ (এনআইসিইউ) এবং ঢাকা জেলা প্রশাসককে। নোটিসে বলা হয়, ‘মিল্ক ব্যাংক’ ইস্যুতে ধর্মীয় বিতর্ক রয়েছে। তা ছাড়া দেশে মিল্ক ব্যাংক করা ১৯৩৭ সালের মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। তাই মিল্ক ব্যাংক স্থাপনে যথাযথ শর্ত আরোপ চাওয়া হয়েছে।
হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক সম্পর্কে ধর্মীয় ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে প্রস্তাবিত ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের’ উদ্যোক্তারা। তবে এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।